Unknown |
October 10, 2017 |
0
comments
এক
গুলবাগিচার অদূরের মোহনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২
ইং সনে প্রতিষ্ঠিত হয় । সমাপনী পরিক্ষায় এই বিদ্যালয়ের পাশের হার গর্ব করেই বলার
মত, মুলত চানপুর ও মোহনপুর গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে , তাছাও পাশবর্তী অষ্টগ্রাম ও তেলীনগর গ্রামের
কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। মোহনপুরেরই এক জমিদার ভাবলেন
শুধু ছেয়ে মেয়েরাই শিক্ষা নিবে মুরব্বিরার জন্য কিছু একটা করা দরকার, যেই ভাবনা
সেই কাজ, প্রতিষ্ঠা করলেন একটা বয়স্ক
স্কুল,বয়স্করা চাইলে লেখাপড়া
করতে পারবে, বাংলা, ইংরেজি, অংকের পাশা পাশি
ধর্মিয় জ্ঞানও । কিন্তু স্কুল দিলেই তো আর হবে না !
স্কুলের সাথে শিক্ষক ও দরকার, তাই শিক্ষক নিয়োগ হবে বলে একটা নামি দামি পত্রিকাতে
বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বিজ্ঞাপন টা দেখে একটু ভাবলাম এই মহৎ পেশার সাথে নিজেকে
যুক্ত করতে পারলে মন্দ হবে না ,আমি প্রস্তুত ইংরেজি শিক্ষক হিসাবে, ইংরেজিতে বিদেশেও আমার
ভাল নাম দাম আছে, গুলবাগিচার প্রেসিডেন্ট এর কাছে গিয়ে বিস্তারিত বললাম, তার
অনুমতিতে এবং তার কাছেই আমার যাবতীয় কাগজ পত্র সত্যায়িত করে নিলাম, পরের দিন
সত্যায়িত কাগজপত্র সহ সরাসরি স্কুলের গভার্নিং বডির বরাবর চলে গেলাম, আমাকে
যাচাইবাচাই করার পর এই মহৎ পেশার সাথে যুক্ত করতে রাজি হয়েছেন তারা, আমাকে বললেন
কবে থেকে আমি জয়েন করতে পারব ,আমি বলিলাম স্যার আমি আগামী কাল থেকে আসতে পারব ইনশা আল্লাহ ,সাথে আমাকে জয়েনিং লেটার ও দিয়ে দেন,
গুলবাগিচায় এসে দেখি বেতন ও নাকি দেওয়া হবে আমাকে, তবে বেতনের ব্যাপারে শর্ত যুক্ত করে দিয়ে দিলেন
আমাকে, তা হল ছাত্র-ছাত্রী যেমন হবে স্কুলে, তার উপর কমিশন্ মানে আমার বেতন । তখন আমি মনে মনে হাসলাম
আর বলতে লাগলাম স্যার আমার কোন বেতন লাগবে না, যদি এই মহৎ পেশার সাথে যুক্ত থেকে
কয়েক জনকে একটু সু-শিক্ষা দিতে পারি তাতেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করিব।
দুই
স্কুলে জয়েন করার পর নিয়মিত স্কুলে ক্লাস নিচ্ছি তাতে কোন
সমস্যা নাই, তবে সামান্য সমস্যার সম্মুখীন
হতে হয় একটা কারণে,তা হল
বয়স, শিক্ষক যখন বয়সে ছাত্র-ছাত্রীর ছোট হয়ে যায় তখন তো শিক্ষকের একটু আনইজি লাগার
ই কথা, যেই
বয়সে লেখা-পড়ার দরকার সে বয়সে তারা করে নাই, যেমন আষার মাসে গাছে পাকা আম, তার পরেও নিজেকে বুঝানর চেষ্টা করি । একদিন আকাশটা মেঘলা মেঘলা,আমি সবাইকে ছুটি দিয়া দিলাম,
সাথে সাথে বড় স্যার এসে আমাকে বলল, মহিলাদের কে ছুটি দিবা তিন মিনিট আগে, আর পুরুষদেরকে
ছুটি দিবা তিন মিনিট পরে,জবাবে
আমি বলিলাম ওকে স্যার,তারপর
আমি বাড়িতে চলে আসিলাম
তিন
পরদিন আবার স্কুলে গেলাম, গিয়ে দেখী সব ছাত্র-ছাত্রী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের
গান গাইতেছে আর আনন্দ করতেছে,আমি তাদের কে বললাম আজ আমরা সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, একটা
ছাত্রের দিকে আমার নজর কাড়িল সে একটু ছাত্র হিসাবে দুষ্টু , আমি বলিলাম তোমার আব্বার নাম কি? ছাত্র
জবাবে বলে আমি বলিবনা,বাইরে
নিয়া দাড় করিলাম কানে ধরাইয়া, ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখী মাত্র আর তিন মিনিট সময় বাকি
আছে ছুটি হইবার, সব ছাত্রীদের ছুটি দিয়া দিলাম,লালবানু চেয়ে দেখে সোনার চান্দু কানে ধরিয়া দাঁড়ানো, লালবানু সোনার চান্দুকে প্রশ্ন করল,তুমি কানে ধরে দাঁড়ানো কেন, উত্তরে চান্দু বলে আমি স্যারকে বলেছি তোমাকে আমি বিবাহ করব না
এ কারনে স্যার আমাকে কানে ধরে দাড় করাইছে,লালবানু বলা শুরু করিল,আমার হাসি আনন্দ কি তোমার কাছে সুন্দর
লাগেনা? আমার রোপ যৌবন সবিই যে তোমার! তখন
চান্দু বলে লালবানু আমি বলেছি তোমাকে বিবাহ করবনা এ এসব দিতে তোমাকে আমি নিষেধ করি নাই, আমি তখন জানালার কাছে বসা সব শুনতে
পাই,হায়রে প্রেম হায়রে
ভালবাসা ! মানতে চায়না কোন বাধা,সাথে সাথে সবাইকে ছুটি দিয়ে আমি সোনা বন্ধুর গান গাইতে
গাইতে বাড়িতে চলে আসিলাম।
তিন
পরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে চেয়ে দেখী উঠানে তিন জন লোক
দাড়ানো,প্রথমজন
মাওলানা মুফতি ফয়েজ উল্লাহর ছেলে, তাকে
আমি বলিলাম তুমি বড় হয়ে কি করবে? উত্তরে সে বলে আমি ডাক্তার হব। তারপর
দ্বিতীয়জন কালামের ছেলে, তাকে ও বলিলাম বলতো আমাদের গ্রামের নাম কি? তখন উত্তরে
বলে, দাদা আমাদের গ্রামের নাম গুলবাগিচা, বাহ বাহ ! তারপর জিজ্ঞাস করলাম তৃতীয়জনকে
অর্থাৎ আবু তাহেরের ছোট ছেলেকে বলতো দাদু গুলবাগিচা প্রেসিডেন্টের নাম কি? উত্তরে সে বলে আব্দুল করিম, বাহ বাহ ! তখন আমি
বলিলাম আমার স্কুলের সময় হয়ে গেছে আমি স্কুলে চলে গেলাম, খেলাধুলা কর কিন্তু
সাবধান সাথে ঝগড়া করিও না,এই কথা
বলে আমি রওনা দিলাম, এমন সময়
আবু তাহেরের ছোট ছেলে বলতেছে, দাদা আপনার পকেটের কলমটা দিয়া যান,তখন আমি বলিলাম কেন ? তখন আমাকে বলে
আর কয় দিন পরে যখন আপনার হাটতে কষ্ট হবে তখন আপনাকে এই কলমে ধরে ধরে হাটামু,তখন সাথে সাথে যেন আমার চোখ দিয়া পানি বাহির হয়ে আসল,আমি যেন সব কিছুতে দিশেহারা হয়ে গেছি, তারপর তিনজনকে তিনটা আদর দিয়া স্কুলে চলে গেলাম,
স্কুলে গিয়ে ভাবতে লাগলাম দেশের প্রতিটা সন্তান যদি আবু তাহেরের ছেলের মত ভাবতো,
মানে কলমের মাধ্যমে সবাই কে সাহায্য করবে, তাহলে আমাদের দেশে অশিক্ষিত বলে আর কিছু
থাকত না, থাকতো না কোন বৃদ্ধাশ্রম। যেমন টা করে যাচ্ছে আমার ভাতিজা জেহাদ উদ্দিন অর্থাৎ
আমাদের গুলবাগিচার প্রেসিডেন্ট জনাব মোঃ জেহাদ উদ্দিন।
সবাইকে ধন্যবাদ
গুলবাগিচা জিন্দাবাদ।
Category:
Articles
0 comments